"স্মৃতির মধুমতি"
বিশ্বাস তন্ময়
অজানা, অচেনা, নির্জন, অন্ধকারাচ্ছন্ন
মধুমতির গাঁ ঘেসে, এক মেঠো পথ ধরে চলেছি
কোন এক গনতব্বহীন ঠিকানাই |
আকাশে কালো মেঘের ঘন-ঘটা,
মাঝে মাঝে বিদুৎ চমকানী, দমকা বাতাস,
সাথে সাথে বৃষ্টির অঝোর ধারা,
যেন শরীরে হিমালয় থেকে
সদ্য জন্ম নেয়া বরফ হয়ে ঝরছে !
জন-মানবহীন মধু যেন, আপন আনন্দে
উপভোগ করছে প্রকৃতির এই অমোঘ যুগোলবন্ধি
সাথে আছি আমি, তীরের এক কণে দাড়িয়ে,
দেখছি উতালপাতাল ঢেউ একেরপর এক
তীরে এসে আঘাত করতে,
সাথে সাথে সে এক মনমাতানো ছ্লাত ছ্লাত শব্দ,
যেন কোন এক সুদক্ষ শিল্পী তারের গাঁয়ে আচোঁড় দিয়ে
আপন মনে উপভোগ করছে সেই ছন্দ |
ঢেউয়ের তালে তালে হেলেদুলে চলেছে এক বৃদ্ধ মাঝি
তার মৃত-প্রায় পালতোলা নৌকাটা নিয়ে,
অন্ধের যষ্টি মিট মিট করে জ্বলা পীদিমটা
এই বুঝি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করলো !
বড়ই মধুর সেই দৃশ্য,
যে এই দৃশ্য স্বচক্ষে না দেখবে
তারপক্ষে হৃদয়ে ধারণ করাতো দূরের কথা
কল্পনা করাও কষ্টকর !
কুয়াশাচ্ছন্ন মধূমতির বুক চিরে
বৃষ্টির প্রতিটি ফোটাই যেন
তীরের মত পতিত হচ্ছে নদীটির বুকে,
এক অনিন্দ সুন্দর ছন্দে !
অবাক হয়ে দেখছি,
প্রতিটি ফোটাই যেন জন্ম দিচ্ছে
এক একটি সদ্য ফোটা তাজা গোলাপের !
তার-ই মাঝে খনে খনে বিদুৎতের ঝলকানিতে
ওপারের চরে বেঁধে রাখা পালতলা নৌকাগুলো
নেচে চলেছে, ঢেউয়ের তালে তালে,
মাঝে মাঝে মাথা নেড়ে নেড়ে
একে-অপরের সাথে খুনশুটি করছে
আপন আনন্দে !
এ যেন এক ব্যাস্তপুরী,
যেখানে সবাই আপন আপন কাজে ব্যাস্ত,
সে এক হৃদয় স্পর্শকারি মনোরম দৃশ্য !
ঐ দূরের গাছ-পালাগুলি যেন,
প্রকৃতির এ আমোঘ লীলা উপভোগ করছে
সবাই-মিলে হেলে-দুলে, আপন হরোষে,
আর পায়ের কাছের ছোট ছোট তৃণগুলি
যেন ভয়ে গুটিসুটি হয়ে
মুখ লুকিয়ে চুপ্টি করে পড়ে আছে
সুবোধ বালোকের মত নির্শব্দে,
যেন মুখ তুলেই সলীল সমাধি হবে ওদের !
বিদুৎতের ঝলকানিতে, বৃষ্টির অমোঘ ধারা পেরিয়ে,
কুয়াশা ভেদ করে, দূরের গাছগুলি ছাপিয়ে,
মাইল খানেক দূরে স্পষ্টভাবেই
সুবিশাল কামারখালি ব্রিজটি
যেন, ছোট্ট একফালি কাটা নখের মতই দেখাচ্ছ,
মনে হচ্ছে যেন লন্ডনের থমাস নদীর তীরে দাড়িয়ে
ওয়েষ্ট-মিনিষ্টার ব্রিজটিই দেখছি !
কিন্তু ক্ষনিকের জন্য সব দৃশ্য ভীতিতে পরিণত করে
বাজখাই শব্দে মধুমতিকে কাপিয়ে
পর পর চারটি বজ্র পতিত হল,
মনে হল ক্ষণিকের জন্য পৃথিবী থমকে গেল,
আমি ভীত চখে তাকিয়ে রইলাম !
আস্তে আস্তে প্রকৃতি তার ঘুঙুর নৃত্য থামালো,
বৃষ্টি চলেগেলো, বাতাস থেমেগেলো, মধুমতি শান্ত হলো,
মেঘগুলো কোথায় যেন হারিয়েগেলো,
মনে হলো, ওরে মেঘ আমাকেও বৃষ্টি করে সঙ্গে নিয়ে চল'না রে !
সবাই একে একে চলে গেল,
শুধু রয়েগেলাম আমি, একা আমি,
শূন্য আকাশের নিচে,
কিন্তু সাক্ষী হয়ে রয়লাম
প্রকৃতির এক অশান্ত অবলীলার
আজকের এ মেঘাচ্ছন্ন বৃষ্টিভেজা রাতে
মধুমতির তীরে ||
কামারখালী, ফরিদপুর, ১৫/০৫/২০১৫
বিশ্বাস তন্ময়
অজানা, অচেনা, নির্জন, অন্ধকারাচ্ছন্ন
মধুমতির গাঁ ঘেসে, এক মেঠো পথ ধরে চলেছি
কোন এক গনতব্বহীন ঠিকানাই |
আকাশে কালো মেঘের ঘন-ঘটা,
মাঝে মাঝে বিদুৎ চমকানী, দমকা বাতাস,
সাথে সাথে বৃষ্টির অঝোর ধারা,
যেন শরীরে হিমালয় থেকে
সদ্য জন্ম নেয়া বরফ হয়ে ঝরছে !
জন-মানবহীন মধু যেন, আপন আনন্দে
উপভোগ করছে প্রকৃতির এই অমোঘ যুগোলবন্ধি
সাথে আছি আমি, তীরের এক কণে দাড়িয়ে,
দেখছি উতালপাতাল ঢেউ একেরপর এক
তীরে এসে আঘাত করতে,
সাথে সাথে সে এক মনমাতানো ছ্লাত ছ্লাত শব্দ,
যেন কোন এক সুদক্ষ শিল্পী তারের গাঁয়ে আচোঁড় দিয়ে
আপন মনে উপভোগ করছে সেই ছন্দ |
ঢেউয়ের তালে তালে হেলেদুলে চলেছে এক বৃদ্ধ মাঝি
তার মৃত-প্রায় পালতোলা নৌকাটা নিয়ে,
অন্ধের যষ্টি মিট মিট করে জ্বলা পীদিমটা
এই বুঝি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করলো !
বড়ই মধুর সেই দৃশ্য,
যে এই দৃশ্য স্বচক্ষে না দেখবে
তারপক্ষে হৃদয়ে ধারণ করাতো দূরের কথা
কল্পনা করাও কষ্টকর !
কুয়াশাচ্ছন্ন মধূমতির বুক চিরে
বৃষ্টির প্রতিটি ফোটাই যেন
তীরের মত পতিত হচ্ছে নদীটির বুকে,
এক অনিন্দ সুন্দর ছন্দে !
অবাক হয়ে দেখছি,
প্রতিটি ফোটাই যেন জন্ম দিচ্ছে
এক একটি সদ্য ফোটা তাজা গোলাপের !
তার-ই মাঝে খনে খনে বিদুৎতের ঝলকানিতে
ওপারের চরে বেঁধে রাখা পালতলা নৌকাগুলো
নেচে চলেছে, ঢেউয়ের তালে তালে,
মাঝে মাঝে মাথা নেড়ে নেড়ে
একে-অপরের সাথে খুনশুটি করছে
আপন আনন্দে !
এ যেন এক ব্যাস্তপুরী,
যেখানে সবাই আপন আপন কাজে ব্যাস্ত,
সে এক হৃদয় স্পর্শকারি মনোরম দৃশ্য !
ঐ দূরের গাছ-পালাগুলি যেন,
প্রকৃতির এ আমোঘ লীলা উপভোগ করছে
সবাই-মিলে হেলে-দুলে, আপন হরোষে,
আর পায়ের কাছের ছোট ছোট তৃণগুলি
যেন ভয়ে গুটিসুটি হয়ে
মুখ লুকিয়ে চুপ্টি করে পড়ে আছে
সুবোধ বালোকের মত নির্শব্দে,
যেন মুখ তুলেই সলীল সমাধি হবে ওদের !
বিদুৎতের ঝলকানিতে, বৃষ্টির অমোঘ ধারা পেরিয়ে,
কুয়াশা ভেদ করে, দূরের গাছগুলি ছাপিয়ে,
মাইল খানেক দূরে স্পষ্টভাবেই
সুবিশাল কামারখালি ব্রিজটি
যেন, ছোট্ট একফালি কাটা নখের মতই দেখাচ্ছ,
মনে হচ্ছে যেন লন্ডনের থমাস নদীর তীরে দাড়িয়ে
ওয়েষ্ট-মিনিষ্টার ব্রিজটিই দেখছি !
কিন্তু ক্ষনিকের জন্য সব দৃশ্য ভীতিতে পরিণত করে
বাজখাই শব্দে মধুমতিকে কাপিয়ে
পর পর চারটি বজ্র পতিত হল,
মনে হল ক্ষণিকের জন্য পৃথিবী থমকে গেল,
আমি ভীত চখে তাকিয়ে রইলাম !
আস্তে আস্তে প্রকৃতি তার ঘুঙুর নৃত্য থামালো,
বৃষ্টি চলেগেলো, বাতাস থেমেগেলো, মধুমতি শান্ত হলো,
মেঘগুলো কোথায় যেন হারিয়েগেলো,
মনে হলো, ওরে মেঘ আমাকেও বৃষ্টি করে সঙ্গে নিয়ে চল'না রে !
সবাই একে একে চলে গেল,
শুধু রয়েগেলাম আমি, একা আমি,
শূন্য আকাশের নিচে,
কিন্তু সাক্ষী হয়ে রয়লাম
প্রকৃতির এক অশান্ত অবলীলার
আজকের এ মেঘাচ্ছন্ন বৃষ্টিভেজা রাতে
মধুমতির তীরে ||
কামারখালী, ফরিদপুর, ১৫/০৫/২০১৫
No comments:
Post a Comment